অবশেষে আটকে গেলো ‘ধর্ষক’ রুহুল আমিনের জামিন
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনার মূলহোতা রুহুল আমিনকে দেওয়া এক বছরের জামিন আদেশ বাতিল করেছে হাইকোর্ট। শনিবার( ২৩ মার্চ) সকালে এই আদেশ রিকল করে অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের খাস কামরায় দুইপক্ষের আইনজীবীদের ডেকে নেন। এরপরই রুহুল আমিনের জামিন প্রত্যাহার করে আদেশ দেন আদালত।
বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে শনিবার ছুটির দিন থাকা সত্ত্বেও আদেশটি রিকল করেন আদালত। এ দিন বেলা ১১টার দিকে বিচারকরা চেম্বারে বসেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়।
তিনি জানান, বিচারপতিরা তাদের চেম্বারে বসে যেখানে রাষ্ট্রপক্ষের ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের ডেকে নেন। চেম্বারে বসেই তারা পূর্বে আদেশের বিষয়ে ফের আদেশ দেন।
আসামি রুহুল আমিনের জামিন নিতে গিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বিভ্রান্ত করেছেন এমন অভিযোগ করে গত ২১ মার্চ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী জানিয়েছিলেন ‘জামিন আবেদনে উল্লেখ আছে এনএক্স-১৭ নম্বর কোর্টের কথা। কিন্তু ওই কোর্টে না গিয়ে এনএক্স ১৪ নম্বর কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে যায়। যেদিন জামিন হয় সেদিন আসলে আমরা বুঝতেই পারিনি কার জামিন হয়েছে। পরে দেখা যায় রুহুল আমিন জামিন নিয়ে গেছে।’
এ জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
কোন যুক্তিতে আসামিকে জামিন দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘আবেদনকারীর আইনজীবী আদালতে বলেছেন যে, মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর)-এ আসামি রুহুল আমিনের নাম নেই। তা ছাড়া মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। এসব বিষয় তুলে ধরে জামিন চাওয়া হয়েছে।’
আদালত আসামি রুহুল আমিনের এক বছরের অন্তবর্তীকালীন জামিনের পাশাপাশি রুলও জারি করেছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় অভিযুক্ত আবেদনকারী মো. রুহুল আমিনের জামিন কেন বৃদ্ধি করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। এছাড়া আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রুহুল আমিনের জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আশেক-ই-রসুল।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে চার সন্তানের জননীর সঙ্গে কয়েক জনের কথাকাটাকাটি হয়। এর জেরে রুহুল আমিনের নির্দেশে ১০-১২ জন তাদের বাড়িতে গিয়ে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে ওই নারীকে গণর্ধষণ ও মারধর করে।
এ ঘটনায় নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে ৯ জনের নামে মামলা করেন। এরপর গত ২ জানুয়ারি গভীর রাতে উপজেলার ৫ নম্বর চরজুবলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়। তারা এখন নোয়াখালী কারাগারে। রুহুল আমিন ছাড়া কারাগারে থাকা অন্য আসামিরা হলেন সোহেল, বাদশা আলম, জসিম, বেচু, স্বপন, হাসান আলী বুলু ও ছালাউদ্দিন।
ওই নারীর স্বামী অভিযোগ করেন, গত ৩০ ডিসেম্বর পাংখারবাজার ১৪ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষে ভোট দিতে দেখে ওই নারীকে হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। ওইদিন রাত ১২টায় কয়েকজন লোক পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলে।
পরে ১৫-১৬ জন সন্ত্রাসী ধানের শীষে ভোট দেয়ায় ওই নারী ও তার স্বামীকে গালাগালি করে। এরপর অস্ত্র দেখিয়ে ওই নারীকে ঘরের বাইরে নিয়ে সবাই মিলে ধর্ষণ ও বেদম মারধর করে। পরদিন প্রতিবেশীদের সহায়তায় ওই নারীকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।